শাড়িতে আবেদনময়ী মডেল অভিনেত্রী সুজানা জাফর
শাড়িতে মডেল অভিনেত্রী সুজানা জাফর

২০০৫ সালে ভারতের বোম্বে হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এ.এস পাতিল ‘শাড়ি’ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন ‘বোম্বে হসপিটাল জার্নাল’ নামের সাময়িকীতে। ভাবছেন, বেটা ডাক্তার হইয়া আবার শাড়ি নিয়া টানাটানি করতে গেলেন কেন? করতেই পারেন! এই অধিকার তো আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একার নয়!

এখন কথা হচ্ছে, ডাক্তার মানুষ শাড়ি নিয়ে কী গবেষণা করলেন? অবশ্য তিনি একা নন; পুরো একটি টিম নিয়ে গবেষণা করেছিলেন, যার নেতৃত্বে ছিলেন ডা. এ.এস পাতিল।

শাড়ি তৈরিতে সাধারণত কটন, সিল্ক, নাইলন, শিফন এবং সিনথেটিক ফেব্রিক জাতীয় উপাদান ব্যবহার করা হয়। শাড়ি পরতে গেলে দেহের কটিরেখা বরাবর এই পোশাকটিকে শক্ত করে আটকে রাখতে হয়। বিশেষ করে পেটিকোটের সঙ্গে। আর ঠিক এখানেই হচ্ছে বিপত্তি!

শাড়ি যেহেতু ভারতীয় উপমহাদেশের নারীরা পরে থাকেন, তাই এখানকার উষ্ণ এবং স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার কারণে দেহের ঘাম কটিরেখায় গিয়ে জমে। সেইসঙ্গে সেখানে জমা হয় ধূলাবালি। এগুলো মিশে যায় শাড়ি তৈরির বিভিন্ন উপাদান এবং রঞ্জকের সঙ্গে। কিছুক্ষণ পরপর পরিষ্কার করারও সুযোগ থাকে না। দীর্ঘদিন এভাবে হতে হতে প্রথমে সামান্য প্রদাহ তৈরি হয়। এরপর কটিরেখার ত্বকের রঙে পরিবর্তন আসতে থাকে। এক পর্যায়ে দীর্ঘকালীন প্রদাহ তৈরি হয় এবং সেখান থেকে নানা রকমের ক্ষত। আর সর্বশেষ ক্যান্সার।

শাড়ি নিয়ে প্রথম আলোতে নিবন্ধ লিখে সমালোচনার মুখে পড়েন বিশ্ব সাহিস্য কেন্দ্রের আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ
শাড়ি নিয়ে নিবন্ধ লিখে সমালোচনার মুখে পড়েন আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ

ডা. এ.এস পাতিল তার গবেষণাপত্রে এই ক্যান্সারের নাম দেন ‘শাড়ি ক্যান্সার’। এরপর থেকে রোগটি এই নামেই পরিচিত। এটা এক ধরনের স্কিন ক্যান্সার। রোগটি অনিরাময়যোগ্য। লক্ষণগুলো তো আগেই বলা হলো। সেইসঙ্গে খুব বাজে দুর্গন্ধ ছড়ায় এই রোগ।

এ ধরনের রোগ সম্পর্কে আরও আগে, ১৯৪৫ সালে ধারণা দিয়েছিলেন ভারতীয় চিকিৎসক ডা. বসন্ত রামজি খানোলকার এবং ডা. সূর্যবাই। তারও আগে একই ধরনের আলসার আবিষ্কার করেছিলেন ফরাসি চিকিৎসক জ্যাঁ নিকোলাই মারজোলিন- ১৮২৮ সালে। এই আবিষ্কারটি ‘মারজোলিনস আলসার’ নামে পরিচিতি। এক্সাইশন বায়োপসির মাধ্যমে এ রোগ শনাক্ত করা যায়।

লেখক রাশেদ আহমেদ শাওন
যদিও শাড়ি ক্যান্সার সচরাচর হয় না, তবু রোগটি নিয়ে ভারতীয় চিকিৎসকরা এখন বেশ সতর্ক করছেন নারীদের। এটা নিয়ে গবেষণা এবং লেখালেখিও হচ্ছে। ২০১১ সালে জার্নাল অব দ্য ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নভেম্বর সংখ্যায় এটা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

শাড়ি পরা সম্প্রদায় আশা করি এখন থেকে শাড়ি পরার আগে দ্বিতীয়বার ভাববেন। রোগটি সচরাচর না হলেও সতর্ক থাকতে দোষ কি!

শাড়ি ছাড়া অন্য ধরনের কিছু পোশাক থেকেও একই ধরনের রোগ হতে পারে। নারী সম্প্রদায়- আপনারা চুড়িদার, না কি একটা সালোয়ার পরেন না! এই জাতীয় পোশাক থেকেও একই ধরনের ক্যান্সার হতে পারে।